উচ্চমাধ্যামিক পাশ করে মাইনে ৪০ হাজার, এমবিএ-র কোনমতে ৭ হাজার

কর্মসংষ্কৃতি নিয়ে অনেক বড় বড় ভাষন বহুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। ডান-বাম সব সরকারই সরকারী কর্মচারীদের মন দিয়ে কাজ করার হরেক দাওয়াই দিয়ে যাচ্ছে, তবুও অবস্থা তথৈবচ। সারাদিনে কাজের কাজ হচ্ছে মেরেকেটে ২ ঘন্টা। আর বাকি সময়, মাসের শেষে মোবাইলে মাইনের মেসেজ সময়মত না ঢুকলে মাথাগরম, বকেয়া ৪৮% ডিএ না পাওয়ার জন্য সরকারের মুন্ডপাত, পে কমিশন নিয়ে চর্চার অন্ত নেই। বর্তমানে দশ বছরের বেশি সময় স্থায়ী পদে আসীন একজন সরকারী কর্মচারীর পারিশ্রমিক গড়ে মাসিক ৩০ হাজার টাকা। এই সমস্ত সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে আবার ৪৫ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক। আবার অন্যদিকে এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতীর সংখ্যা প্রায় সারে তিন লাখ। এদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ কর্মরত উচ্চ শিক্ষিতের পারিশ্রমিক গড়ে মাসিক ৭ হাজার টাকা। পারিশ্রমিকের ভারসাম্যের এই ব্যাপক দুরত্বটিকে অর্থনৈতিক ভাষায় কি বলে জানা নেই, তবে রক্ত-মাংসে গড়া একজন মানুষ হিসাবে বলতে পারি, এ এক চুড়ান্ত প্রহশন ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষা ও আয়ের ভারসাম্য বজায় রাখার কোন মাপকাঠি আজ পর্যন্ত এ দেশে তৈরীই হয় নি। তাই দিনের পর দিন পড়াশোনা শিখেও সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এক শ্রেনীর কপালে জুটছে সর্ব সাকুল্লে ৭ হাজার টাকা, আর অন্যদিকে কোনরকমে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বহাল তবিয়তে খেয়ে, ঘুমিয়ে, খবরের কাগজ পরে মাসের শেষে ৩০ হাজার টাকা মাইনে নিয়ে চলে যাচ্ছে অন্য এক শ্রেনী। এদের আবার ডিএ চাই, আরো ছুটি চাই, আরো সুযোগ-সুবিধা চাই। এবার সত্যিই বোধহয় ভেবে দেখার পালা এসেছে। বাইরে ৪০ ডিগ্রি গরমে একবার এমবিএ পাশ করা এক যুবক একটি সরকারী অফিসে একটি সংস্থার বিমা বিক্রি করতে আসে। ওই অফিসের বড়বাবু ওই ছেলেটিকে, এখন যাও, বিরক্ত কোরো না, এসব লাগবে না- বলে তাড়িয়ে দেন। ওই বড়বাবু কোন রকমে মাধ্যমিক পাশ করে সরকারী চাকুরী পেয়ে গিয়েছিলেন। কিছক্ষন পর ওই অফিসের অদূরে এক রাস্তার ধারে ওই ছেলেটির নিথর দেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। গরমে সানস্ট্রোক হয়ে গিয়েছিল। পরেরদিন খবরের কাগজে প্রথম পাতায় ছাপা হয়, গরমে সানস্ট্রোকে শহরে তিন জনের মৃত্যু । সেদিন অফিসে গিয়ে খবরের কাগজ দেখে ওই বড়বাবুর মন্তব্য, দেখ সুশীল, আজও তিনটে মরেছে গরমে।